Recent Updates
Tag

ডিজিটাল সুরক্ষা

Browsing

একবিংশ শতাব্দীর ডিজিটাল মাধ্যমে যোগাযোগের বিকাশ ও নিরাপদ  করার লক্ষ্যে অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জের নাম ডিজিটাল নিরাপত্তা ও ডিজিটাল অপরাধ কমানো। বর্তমান সময়ে অনলাইনে প্রতিদিন শতকোটি তথ্য বা ডেটা আদান-প্রদান করা হচ্ছে, যার মধ্যে অনেক প্রাতিষ্ঠানিক গোপনীয় তথ্য থাকে।

আবার ব্যক্তিগত অনেক তথ্য থাকে; যেগুলো বেহাত হলে হয়ে যেতে পারে অনেক বড় ক্ষতি। সেই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে সাইবার অপরাধের সংখ্যাও। ডিজিটাল এই যুগে কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও ভার্চুয়াল জগতের সঙ্গে আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় সবাই জড়িত। প্রতিদিন ব্যবহার ও যোগাযোগের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট।

সাইবার নিরাপত্তা বা সিকিউরিটি কি?

সাইবার সিকিউরিটি বা নিরাপত্তা তথা ডিজিটাল সুরক্ষা হল এমন একটি শৃঙ্খলা যা হ্যাকার, স্প্যামার এবং সাইবার অপরাধীদের মতো জঘন্য অভিনেতাদের ইলেকট্রনিক আক্রমণ থেকে কীভাবে ডিভাইস এবং পরিষেবাগুলিকে রক্ষা করতে হয় তা কভার করে৷ যদিও সাইবার নিরাপত্তার কিছু উপাদান প্রথমে আঘাত করার জন্য ডিজাইন করা হয়, আজকের বেশিরভাগ পেশাদাররা আক্রমণ থেকে কম্পিউটার এবং স্মার্টফোন থেকে নেটওয়ার্ক এবং ডাটাবেস রক্ষা করার সর্বোত্তম উপায় নির্ধারণের উপর বেশি মনোযোগ দেন।

<yoastmark class=

পরিচয় চুরি বা তথ্য লোপাট থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ডিজিটাল অস্ত্র পর্যন্ত সাইবার অপরাধের প্রতিটি প্রকারের বিরুদ্ধে সুরক্ষার প্রক্রিয়া বর্ণনা করতে মিডিয়াতে সাইবার নিরাপত্তা একটি প্রচলিত ও পরিচিত শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই লেবেলগুলি বৈধ, কিন্তু তারা কম্পিউটার বিজ্ঞানের ডিগ্রি বা ডিজিটাল শিল্পে অভিজ্ঞতা ছাড়াই সাইবার নিরাপত্তার প্রকৃত প্রকৃতি ধরতে ব্যর্থ হয়৷

ডিজিটাল আক্রমণ থেকে সিস্টেম, নেটওয়ার্ক এবং প্রোগ্রামগুলিকে রক্ষা করার অনুশীলন হিসাবে সাইবার নিরাপত্তা বলা যায় ৷ এই সাইবার আক্রমণগুলি সাধারণত সংবেদনশীল তথ্য অ্যাক্সেস, পরিবর্তন বা ধ্বংস করার লক্ষ্যে থাকে; ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়; অথবা স্বাভাবিক ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করছে।

সাইবার নিরাপত্তা ও বাংলাদেশঃ

সামাজিক ও স্বাভাবিক কারনে আমাদের আইটি সেক্টরে উন্নতির ফলে আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার ও ইন্টারনেট ভিত্তিক কাজের পরিধি অনেক বেড়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশে যেখানে ১৩ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বর্তমান জনসংখ্যার ৬২%। ইন্টারনেট ব্যবহার করে যেমন মানুষ উপকৃত হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্রয়-বিক্রয় আর্থিক লেন-দেন, আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে কর্মসংস্থান, কমছে বেকারত্বের হার। সাড়ে ৬ লাখের উপরে ফ্রিল্যান্সার ঘরে বসেই দেশ-বিদেশে ব্যবসা করছে। এটিই ডিজিটাল বাংলাদেশের কৃতিত্ব।

 

সাইবার নিরাপত্তার গুরত্ত্ব ও চ্যালেঞ্জগুলো কি কি

আজকের ডিজিটাল বিশ্বে, কেউ সাইবার নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করতে পারে না। একটি একক নিরাপত্তা লঙ্ঘন লক্ষ লক্ষ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করতে পারে। এই লঙ্ঘনগুলি কোম্পানিগুলির উপর একটি শক্তিশালী আর্থিক প্রভাব ফেলে এবং গ্রাহকদের বিশ্বাস হারায়। সুতরাং, স্প্যামার এবং সাইবার অপরাধীদের হাত থেকে ব্যবসা এবং ব্যক্তিদের রক্ষা করার জন্য সাইবার নিরাপত্তা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

ফোর্বসের মতে , 2022 আমাদেরকে বৈচিত্র্যময় এবং ভয়ঙ্কর সাইবার নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের একটি প্যাক নিয়ে হাজির করবে, সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হওয়া থেকে স্মার্ট ডিভাইসের ঝুঁকি বাড়ানো থেকে শুরু করে ক্রমাগত সাইবার নিরাপত্তা প্রতিভার খরা পর্যন্ত সবকিছু।

সাইবার ক্রাইম ম্যাগাজিনের মতে , 2025 সালের মধ্যে সাইবার ক্রাইম বার্ষিক 10.5 ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করবে! অধিকন্তু, বিশ্বব্যাপী সাইবার অপরাধের খরচ আগামী চার বছরে প্রায় 15 শতাংশ বার্ষিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে ।

মহামারী, ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং দূরবর্তী কাজের বৃদ্ধির মতো ধারণাগুলি অপরাধীদের সুবিধা নেওয়ার জন্য একটি লক্ষ্য-সমৃদ্ধ পরিবেশ তৈরি করতে একত্রিত হচ্ছে।

সাইবার নিরাপত্তা কম্পিউটার সিস্টেম, ডেটা এবং নেটওয়ার্ককে আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রযুক্তি, প্রক্রিয়া এবং পদ্ধতিগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে। “সাইবার নিরাপত্তা কি” এবং কিভাবে সাইবার নিরাপত্তা কাজ করে এই প্রশ্নের সর্বোত্তম উত্তর দিতে, আমাদের এটিকে সাবডোমেনের একটি সিরিজে ভাগ করতে হবে:

অ্যাপ্লিকেশন নিরাপত্তা

অ্যাপ্লিকেশন নিরাপত্তা বিভিন্ন ধরনের হুমকির বিরুদ্ধে একটি প্রতিষ্ঠানের সফ্টওয়্যার এবং পরিষেবাগুলিতে বিভিন্ন প্রতিরক্ষা বাস্তবায়নকে কভার করে। এই সাব-ডোমেনের জন্য সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সুরক্ষিত কোড লিখতে, সুরক্ষিত অ্যাপ্লিকেশন আর্কিটেকচার ডিজাইন করতে, শক্তিশালী ডেটা ইনপুট বৈধতা প্রয়োগ করতে এবং আরও অনেক কিছুর জন্য প্রয়োজন, যাতে অননুমোদিত অ্যাক্সেস বা অ্যাপ্লিকেশন সংস্থানগুলির পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম হয়। 

ক্লাউড নিরাপত্তা

ক্লাউড সিকিউরিটি অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস, গুগল, অ্যাজুর, র্যাকস্পেস ইত্যাদির মতো ক্লাউড পরিষেবা প্রদানকারী ব্যবহার করে এমন কোম্পানিগুলির জন্য নিরাপদ ক্লাউড আর্কিটেকচার এবং অ্যাপ্লিকেশন তৈরির সাথে সম্পর্কিত।

 

কিভাবে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়ঃ

কিভাবে সাইবার নিরাপত্তা বাড়ানো যায় 0How to tide cyber security-bangla note boi
কিভাবে সাইবার নিরাপত্তা বাড়ানো যায়-How to tide cyber security-bangla note boi

কম্পিউটার ও স্মার্ট ডিভাইস ছাড়া অফিস নিজের কাজ চিন্তারও বাইরে। কেবল কাজ নয়, প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়সহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কম্পিউটারে ডিজিটাল ফাইল আকারে সংরক্ষিত থাকে যা আমাদের কাছে অতিগুত্বপুর্ণ। অফিসে সাধারণত যে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়, তা নিরাপদ রাখা যেমন জরুরি তেমনি আমাদের ব্যবহারিক ডিভাইসটিরও যথার্থ নিরাপত্তা দরকার। ব্যবস্থাপককে অফিসের নেটওয়ার্ক নিরাপদ কি না, তা নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসন বিভাগসহ মানবসম্পদ বিভাগের তথ্য যাতে বেহাত না হয়, সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে। অ্যাডমিন আইডিতে যেন বাইরের কেউ ঢুকতে না পারে, তা নিশ্চিত রাখতে হবে।

ডিজিটাল যুগে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভরতা জীবনে নিরাপদ থাকার জন্য আমরা কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে পারি যা নিচে উল্লেখ করা হলো।

সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিরাপত্তায় করণীয় ও বর্জনীয় কি !

সোশ্যাল মিডিয়া সুরক্ষা
✓ ৮-১৫ সংখ্যার শক্তিশালী পাসওয়ার্ড/পিন ব্যবহার করা যা ইউনিক হতে হবে।
✓ মাল্টিফেক্টর অথেনটিকেশন সেবা চালু রাখতে হবে।
✓ জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট এর কপি/ছবি ইত্যাদি কোন ভাবেই অপরিচিত কারো সাথে আদান-প্রদান না করা।
✓ অনলাইনে অপরিচিত ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করা থেকে বিরত থাকুন।
✓ ম্যাসেজ এ কারো দেওয়া কোনো লিংক (ওয়েবসাইট) এ প্রবেশ করবেন না বা করলে আগে যাচাই করে নিন।
✓ নিজের ছবি, ভিডিও বিভিন্ন তথ্য শেয়ার এর পূর্বে নির্দিষ্ট শেয়ার প্রাইভেসি নির্বাচন করা দরকার।

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে কিছু নির্দেশনা
✓ যেকোনো পোষ্ট শেয়ার করার পূর্বে তার সত্যতা যাচাই করে নিন।
✓ সংবেদনশীল কোনো তথ্য আদান-প্রদান, সংরক্ষণ ও পোষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
✓ যতটা সম্ভব নিজের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা নিশ্চিত করুন এবং অন্যদের জানাতে অহেতুক তথ্য প্রচার করা যাবে না।
✓ ধর্মীয় উস্কানিমূলক কোনো তথ্য পোষ্ট, শেয়ার কিংবা বার্তা প্রেরণ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।
✓ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন এবং দেশে প্রচলিত আইন সম্পর্কে সচেতন হোন।

কম্পিউটার / মোবাইল ফোন সুরক্ষা
✓ ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস থেকে সুরক্ষায় মোবাইল এ এন্টিভাইরাস সেবা নিশ্চিত করুন।
✓ ইমেইল এ প্রাপ্ত ফাইল ডাউনলোড করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন কারন এখানে হ্যাকিং ইলিমেন্টস থাকতে পারে।
✓ শুধু মাত্র প্রয়োজনীয় বৈধ এপ্লিকেশন/সফটওয়্যার ব্যবহার করুন।
✓ অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার মুছে ফেলুন অথবা নিষ্ক্রিয় করে রাখুন।
✓ সব সময় আপনার ফোন বা ডিভাইস হালনাগাদ রাখুন।

কম্পিউটার ও মোবাইল ব্যবহারে সতর্কতা

কম্পিউটার মোবাইল ব্যবহারে কিছু নির্দেশনা
✓ সংবেদনশীল ছবি সংরক্ষণ না করা।
✓ নিজের ব্যক্তিগত ডিভাইস অন্যকে ব্যবহার করতে দেয়া থেকে বিরত থাকা।
✓ ব্যবহৃত ডিভাইস পুনরায় বিক্রির অথবা মেরামত করানোর সময় সাবধানতা অবলম্বন করা।
✓ অপরিচিত কারো পেন ড্রাইভ, মেমোরি কার্ড ব্যবহার না করা।
✓ অপরিচিত কোথাও “ফ্রি ওয়াইফাই’ ব্যবহার না করা।
✓ ইন্টারনেটে বিচরণে সাবধানতা অবলম্বন করা। শুধু মাত্র প্রয়োজনীয় বৈধ এপ্লিকেশন/সফটওয়্যার ব্যবহার করা।

আরো কিছু নির্দেশনা
✓ সন্দেহভাজন কারো ফোন কলে পেলে তার পরিচয় যাচাই করুন।
✓ এসএমএস এ প্রাপ্ত ওটিপি কোড গোপন রাখুন।
✓ অপরিচিত ব্যক্তির সাথে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার থেকে বিরত থাকুন।
✓ একাউন্ট তৈরিতে ব্যবহৃত তথ্য গোপন রাখুন।
✓ অনাকাঙিক্ষত অপ্রয়োজনীয় প্রাপ্ত এসএমএস, কল যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।
✓ কোনো লিংক এ প্রবেশ করার পূর্বে যাচাই করে নিন লিংকটি ফিশিং লিংক কিনা?
✓ প্রতারণার শিকার হলে দ্রুত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করুন।

সাইবার জগতে শিশুদের নিরাপদ রাখতে আমাদের করণীয়
✓ নিজেদের ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট ব্যবহার করতে দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
✓ নির্দিষ্ট পলিসি অনুযায়ী সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে আলাদা একাউন্ট তৈরি করুন।
✓ অনলাইন এ বিচরণ নিয়ন্ত্রণ করুন অর্থাৎ অকারণে ব্যবহার নয়।
✓ আপনার ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে দেয়ার ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্যারান্টাল কন্ট্রোল নিশ্চিত করুন।
✓ সাইবার নিরাপত্তা এবং করণীয় সম্পর্কে শিক্ষা দিন।

সুত্র: ভোরের কাগজ(জেনিফার আলম, সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক) ও ইন্টারনেট ।  

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিগণের তালিকাঃ ১৯৭১ সাল থেকে বর্তমান

কিভাবে চাকরির প্রস্তুতি নিবেন