Recent Updates
Tag

লাইফস্টাইল

Browsing

চুলের জট কি? 

আমাদের শরীরের অন্যতম সৌন্দর্য বর্ধক অংশ হল আমাদের মাথার চুল। হাত, পা, মুখ প্রভৃতির মতই চুলের যত্ন নেয়া দরকার না হলে তেলময়লা জমে চুল নোংরা হয়ে যায় আর অবধারিত জট পড়ে। চুল নিয়মিত না আছড়ালে বা না কাটলে ডগার দিক থেকে চুল রুক্ষ হয়ে যায়, ডগা ফেটেও যায়। এ  কারনে চুলে জট পড়ে বেশি। আর এই জট পড়া চুল দেখতে যেমন দৃষ্টিকটু তেমনি বিরক্তিকর। ভিবিন্ন কারনে চুলে জট পড়ে যায়, আমরা যদি সেই জটগুলি যথাযথভাবে মোকাবেলা না করি আতাহলে আমরা চুল নিয়ে অনেক ঝামেলায় পড়তে পারি।

চুলের জট কেন হয়- কি কি কারনে হয়? 

আমাদের শরীরের বিশেষত মাথায় বেশি চুল থাকে। এই চুল হলো মূলত কেরাটিন নামক শক্ত প্রোটিন দিয়ে তৈরি এক ধরনের তন্তু।যার পিএইচ মান প্রায় ৫.৫। যেকোন কারণে এই পিএইচ -এর মান বেড়ে গেলে প্রোটিনের চারিত্রিক পরিবর্তন ঘটে যার ফলে কিছুটা নরম হয়ে চুল আঠালো হয়ে পড়ে। এর ফলে একটি চুল আরেকটি চুলের সাথে আটকে যায়।  

চুলের যত্ন-  চুলের-জট-বাংলা-নোট-বই

স্বাভাবিক অবস্থায় এটা এড়ানোর জন্য প্রতিটি চুলের গোড়ায় একটি করে তেল গ্রন্থি (সিবেসিয়াস গ্ল্যান্ড)বিদ্যমান থাকে যা থেকে তেল উৎপন্ন হয় এবং চুলের দৈর্ঘ্য বরাবর ছড়িয়ে পড়ে। তেলটি ফ্যাটি এসিড দিয়ে তৈরি তাই এর পিএইচ চুলের পিএইচের খুব কাছাকাছি হওয়ায় চুল স্বাভাবিক ভাবে মসৃণ ও ছড়ানো থাকে। কিন্তু চুল লম্বা হওয়া অথবা নিয়মিত চুল আঁচড়ানোর মাধ্যমে সেই তেল পুরো চুলে ছড়িয়ে না দেওয়া কিংবা কোন কারণে তৈলগ্রন্থি থেকে কম তেল (সেবাম) তৈরি হওয়া চুলে জট লেগে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

একটু খেয়াল করে দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে চুলের জট চুলের গোড়ায়  লাগে না বরং চুলের শেষ প্রান্তে অর্থাৎ চুলের গোড়ার ঠিক উল্টোদিকে লাগে।কারণ সবসময় সেবাম তেল চুলের প্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে না। আর এ কারণে নিয়মিত চুল আঁচড়ানো খুব দরকার। এবং একই কারণে চুলে নারিকেল তেল বা অন্যন্য চুলের তেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

গোসলের পর অথবা চুল ভেজা থাকলে চুলে জট লাগার কারণও একই। আমরা জানি পানির পিএইচ মান হল ৭। যা চুলের চেয়ে বেশি। তাই চুল বেশিক্ষণ পানিতে ভিজে থাকলে ভেজা চুলে জট বেঁধে যায়। পীর মুর্শিদ বা সাধকদের জট দেখা যায় কারণ তাদের মাথায় কেরাটিন বেশী। 

চুলের জটের কিছু ইতিহাস 

যখন ক্যামেরা আবিষ্কার হয়নি তখন চাক্ষুষ দর্শনের মতও কিছু ছিল না তবে ছিল শিল্প। ভাস্কর্য, স্থাপত্যের নিদর্শনে আদিকালের রাজা, পাদ্রি এবং নামীদের কেশ সজ্জিত থাকত ড্রেডলকে। ৬১৫ থেকে ৪৮৫ বিসি এই সময়ে গ্রীকদের মধ্যে ড্রেডলকের প্রচলন ছিল,  ভাস্কর্য, স্থাপত্যে খোঁদাই আছে সেই নিদর্শনই। যুদ্ধক্ষেত্রেও বীরেরদের পরিচয় ছিল এই চুলের জট। ‘স্পার্টান’  ইতিহাসের বীর শ্রেষ্ঠদের তালিকায় যারা একেবারে প্রথম সারিতে ছিল, সেই স্পার্টানদের শরীরী ভাষা, তাঁদের অস্ত্র, তাঁদের হুঙ্কারের সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল ড্রেডলক ইতিহাস। এমনকি ইসলামের সুফি আন্দোলনের সময় (১৮৮৭ সাল) শেখ আমাদু বম্বা মাক্কেও জটাধারী হয়েই লোকপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে ছিলেন যার ইতিহাস সর্বজন বিদিত।

এছাড়াও সন্যাসী, সাধু-পুরুষ কিংবা সাধকদের মধ্যে আজও চুলের জটের ঐতিয্য লক্ষ্য করা যায়। সনাতন সংস্কৃতির সাথে এই চুলের জট বা জটা ওতপ্রোতভাবে জরিত। মাথায় বিশাল জটা শিবের প্রতিক হিসাবে গণ্য করে মেনে চলার রেওয়াজও আছে। 

চুলের যত্ন- চিরনি দিয়ে চুল আঁচড়ানো

চুলে জট লাগার করন

  • নিষ্ঠূরভাবে চুলের যত্ন করা বা এমন কিছু ব্যবহার করা 
  • শ্যাম্পু করার সময় চুল ম্যাসাজ করা খুব বেশী চুল ঘষা  
  • ওভার-ওয়াশিং বা বেশি বেশি চুল ধোওয়া 
  • হাইড্রেশনের অভাব বা চুলের শুস্কতা 
  • হিট স্টাইলিং 
  • চুলে বেশি পরিমানে বাতাস করা 
  • প্রতিদিন চুল ব্রাশ না করা বা একেবারেই ব্রাশ না করা 
  • চুল নিচে রেখে ঘুমানো 
  • তাপ-ক্ষতিগ্রস্ত, সূর্য-ক্ষতিগ্রস্ত, বা ব্লিচ-ক্ষতিগ্রস্ত 
  • যে চুলে ভাঙার প্রবণ বেশি
  • কাঁধের দৈর্ঘ্যের চেয়ে লম্বা চুল 
  • স্বাভাবিকভাবে কোঁকড়ানো চুল 
  • বেশি শুষ্ক চুল
  • নিয়মিত হট স্টাইলিং টুলের সংস্পর্শে আসে এমন চুল 
  • অ্যালকোহল, যেমন হেয়ারস্প্রে, মাউস বা জেল বেশি ব্যবহার করা 

চুলের জট বাধার প্রতিকার-

জট পড়ার কারণ দেখেই আপনি হয়তো বুঝতে বুঝতে পারছেন যে কারনগুলোর প্রতিকার করতে পারলেই চুলের জট এড়ানো সম্ভব, এবং চুলের নিয়মিত যত্নই জটমুক্তির একমাত্র উপায় বলে বিশেষজ্ঞদের ধারনা।এখানে চুলের যত্ন ও জট মুক্তির কিছু জেনে নিন, এগুলো অনুশীলন করলে চুলে জট পড়া আটকাতে পারবেন আশা করা যায়। 

চুলের যত্ন-  চুলের-জট-বাংলা-নোট-বই

নিয়মিত চুল ছাঁটুন

স্প্লিট-এন্ডস চুলের জট লাগার একটি অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে। এটি আপনার চুলে শুধু জটই বাধায় না বরং তা বাড়তেও বাধা দেয়। এজন্য চুলের আগা নিয়মতি ছাঁটাই করুন এবং চুলের জত্ন নিন। 

চুলের ডগার দিক থেকে জট ছাড়ান

যখন চুল আঁচড়াবেন, সবসময় নিচের দিক থেকে শুরু করবেন। চুলের নিচের দিক থেকে দু’ ইঞ্চি পরিমাণ চুল নিয়ে আঁচড়ে জট ছাড়ান, তারপর উপরের দিকে উঠুন। এভাবে চুল আঁচড়ালে জটও ছাড়াতে পারবেন, চুল ভাঙবে-ঝরবেও কম।

জট ছাড়ান আপনার আঙ্গুল দিয়ে 

চুলে লেগে থাকা জট ছাড়ানোর সবথেকে  আর কার্যকরী উপায় হলো হাত দিয়ে জট ছাড়ানো। বিশেষত  আপনার আঙুল ব্যবহার করতে পারলে ভাল।  আপনি আপনার আঙ্গুলকে যেভাবে এক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারেন কোনও চিরুনি বা ব্রাশ এত ভালো কাজ করে না! ধীরে ধীরে চুলের সমস্ত গিঁট, জট খুলে নিন, তারপর চিরুনি বা ব্রাশ দিয়ে আঁচড়ে নিতে পারেন। 

বড়ো দাঁড়ার চিরুনি ব্যবহার করুন

আগেই বলা হয়েছে, আপনার চুলের জট ছাড়াতে আপনার হাতের আঙ্গুলই সবথেকে উপকারী ও কার্যকরী কিন্তু আপনি এক্ষেত্রে চিরনিও ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে সরু চিরুনি দিয়ে চুলের জট ছাড়ানো খুব কঠিন এবং আপনার চুল ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং এর ফলে চুল আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে। তাই মোটা দাঁড়ার কাঠের বা ভালো মানের প্লাস্টিকের চিরুনি দিয়ে ধীরে ধীরে চুল আঁচড়ে নিতে পারেন। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন- বেশি টানাটানি করবেন না। 

তেল ও শ্যাম্পুর ব্যবহার 

চুলের শুষ্কতা ও অপরিচ্ছন্নতার কারনেই মুলত জট হয়ে থাকে। তাই চুল নরম রাখতে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন স্কাল্পে হট অয়েল ম্যাসাজ করতে হবে। ম্যাসাজের পর গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে মাথায় পেঁচিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। এতে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে তেলের পরিপূর্ণ পুষ্টি। এরপর শ্যাম্পু করুন। প্রোটিনযুক্ত শ্যাম্পু এমন চুলের জন্য উপযোগী। শ্যাম্পুর পর অবশ্যই কন্ডিশনার লাগাতে ভুলবেন না। কন্ডিশনার চুলের সঠিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে। দিনভর চুল থাকবে নরম ও সতেজ। জটযুক্ত চুলের জন্য প্রোটিন ও ময়েশ্চারাইজারসমৃদ্ধ কন্ডিশনার বেছে নিন। ভিটামিন-ই ও অ্যালোভেরাসমৃদ্ধ কন্ডিশনারও রুক্ষ ও শুষ্ক চুলকে প্রাণবন্ত করতে সাহায্য করে। ঘরোয়া কন্ডিশনার চাইলে আপেল সিডর ভিনেগার বেশ ভালো। শ্যাম্পু করার পর আধা মগ পানিতে দুই টেবিল চামচ আপেল সিডর ভিনেগার মিশিয়ে সব চুলে ঢেলে মাথা মুছে নিন। এরপর আর চুল ধোবার প্রয়োজন নেই। চুল নরম ও উজ্জ্বল হবে।

কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন 

আপনি হয়তো চুলের যত্নের অংশ হিসাবে চুলে নিয়মিত শ্যাম্পু করে থাকেন, কিন্তু চুলে শ্যাম্পু করাই যথেষ্ট নয়। শ্যাম্পুর পর অবশ্যই ময়শ্চারাইজ়ার লকিং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন যা চুল মসৃণ আর নরম রাখে। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার যে কন্ডিশনার লাগানোর পরে সঙ্গে সঙ্গে তা ধুয়ে ফেলবেন না। অন্তত ২ মিনিট রেখে তারপর ধুয়ে ফেলুন।

হেয়ার প্যাক ব্যবহার করা 

চুলের রুক্ষতা কমাতে সপ্তাহে একদিন হট অয়েল ম্যাসাজ করে চুলে মানানসই প্যাক লাগান। জট লেগে যাওয়া চুলের জন্য কলা খুব উপকারী। কলায় প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, পটাসিয়াম, প্রাকৃতিক তেল ও ভিটামিন থাকে, যা চুলকে নরম ও ঝলমলে করে। পাকা কলা চটকে দুই টেবিল চামচ মধু, দুই টেবিল চামচ সরিষার তেল মিশিয়ে পুরো চুলে ভালো করে লাগান। আধা ঘণ্টা পর শ্যাম্পু  করুন। এই প্যাক চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। সপ্তাহে এক দিন নিয়মিত ব্যবহারে চুল হবে নরম, উজ্জ্বল ও জটমুক্ত। ডিপ কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্ট চুলকে জটমুক্ত রাখতে সাহায্য করবে। এ জন্য একটি ডিমের কুসুমের সঙ্গে এক টেবিল চামচ মধু, দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, এক চা চামচ আমন্ড অয়েল, এক চা চামচ গ্লিসারিন ও একটি ভিটামিন ই-ক্যাপ ভালো করে মিশিয়ে নিন। সবগুলো উপাদান মিশে গেলে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। প্রথমে স্বাভাবিক পানি দিয়ে ধুয়ে শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে এক দিন ডিপ কন্ডিশনিং চুলের রুক্ষতা দূরে রাখবে।

ঘুমানোর আগে চুল বাঁধুন

ঘুমানোর সময় আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খুব কমই সচেতন থাকি বিশেষত চুলের যত্ন যা অত্যন্ত জরুরী। আমরা যদি চুল খোলা রেখে ঘুমাই তবে এটি অনাবরত ঘর্ষণ হতে থাকে এবং একটি আরেকটির সাথে জড়িয়ে যায়। এজন্য ঘুমের আগে চুল সর্বদা বেণী করতে পারেন অথবা খোঁপা করে বেধে রাখতে পারেন, যাতে সেগুলি জট না লাগতে পারে।

আপনার চুলে তাপ দেয়া থেকে বিরত থাকুন 

চুলে ব্যবহার করা স্ট্রেইটনার বা কার্লার বা এমন জাতীয় অন্য কোনো সরঞ্জাম চুলের ব্যাপক ক্ষতি করে। এগুলো ব্যবহারের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ চুলের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর ফলে চুলে জট লাগার সমস্যা বেড়ে যায়। এই কারণে এসব স্টাইলিং সরঞ্জাম ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।

চুলের যত্নে নিয়মিত খাবারদাবার

আপনার চুলের রুক্ষতা দূর করতে প্রথমেই সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। চুলের জন্য প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, মিনারেল ও ভিটামিন প্রয়োজন। প্রতি বেলা খাবারে ভিটামিন-এ থাকা জরুরি। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা চুলকে শক্ত ও মজবুত রাখতে সাহায্য করে। দুধ, গাজর, মুলা, সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর ভিটামিন-এ থাকে। ভিটামিন-সির অভাবে চুল শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। তাই এ সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন লেবুজাতীয় ফল, পেয়ারা, কামরাঙ্গা, কমলালেবু, জাম্বুরা বা যেকোনো টক ফল খান। এ ছাড়া প্রতিদিনের ডায়েটে শস্যদানা, দুধ, ডিম, কলা, বাদাম, কলিজা এবং ডাল প্রভৃতি শস্যজাতীয় খাবার রাখুন। এসব খাবার চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায়। 

চুলের যত্ন-  চুলের-জট-বাংলা-নোট-বই

সুন্দর চুলের জট এড়ানোর কিছু টিপস

যা যা করবেন- 

১. আপনার চুল যদি সহজে জট লেগে যায় তবে ধোয়ার আগে আপনার চুল ব্রাশ করুন।

২. আপনার চুলে নিয়মিত কন্ডিশনার লাগান এবং চুল গুছিয়ে রাখতে চুল আঁছড়ান এবং কন্ডিশনারটি সমানভাবে চুলের আগা-গোড়াছড়িয়ে দিন। তবে সাবধানতা অবলম্বন করুন কারণ ভেজা চুল ঝরে পড়ার প্রবণতা বেশি।

৩. বাতাসের দিনে একটি স্কার্ফ বা টুপি ব্যবহার করুন যাতে আপনার চুল সব জায়গায় জট না থাকে।

প্রতি ৪-৫ সপ্তাহ অন্তর আপনার চুল ছাঁটাই করুন। আপনার চুলের বিভক্ত প্রান্তগুলি জট সৃষ্টি করে, যা আপনার চুলকে ক্ষতিগ্রস্ত এবং শুষ্ক দেখায়।

৪. আপনার চুল শুকানোর জন্য একটি নরম সুতির টি-শার্ট ব্যবহার করুন।

যা যা করবেন না- 

১. তোয়ালে দিয়ে চুল ঘষবেন না কারণ এতে চুল জট পড়তে পারে।

২. খোলা চুলে ঘুমাবেন না।

৩. তুলোর বালিশে ঘুমাবেন না।সিল্কের বালিশে স্যুইচ করুন 

৪. তাপ উৎপন্ন করে এমন পণ্য চুলের যত্নে এড়িয়ে চলুন কারণ এগুলো চুলের ক্ষতি করে। চুলের ক্ষতি স্পষ্টতই আরও জট বাধায়। 

৫. বেশি ফেনা তৈরির হয় এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত নয় কারণ বেশি ফোম মানেই বেশি ভাল পরিষ্কার করা নয়। এটা ভালোর চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে।

আপনার দেহের সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি বা দেহের লাবন্যর সাথে সামঞ্জস্যর মাথার চুল পরিষ্কার ও সুন্দর-জট মুক্ত হওয়া একান্ত প্রয়োজন। এখানে চুলের জট লাগার কারন ও তা থেকে পরিত্রানের উপায় আলোচনা করা হয়েছে। এবং কিছু পরীক্ষিত উপায় দেয়া হয়েছে যা সুন্দর ও জটমুক্ত চুলের জন্য অনুশীলন করতে পারেন। 

আরও পড়তে পারেন-

বাংলা ব্যকরণ- এক কথায় প্রকাশ বা বাক্য সংকোচন

অনুসরণ করুন-

একটি দিনের  শুরু মানেই নতুন সম্ভাবনা। আর দিনের শুরুটা তাই রুটিন মাফিক নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে করাটা অত্যন্ত  জরুরী। সকালের নিয়মিত অভ্যাসগুলি কেমন হওয়া দরকার সে বিষয়ে আলোচনা করার আগে সকালে উঠার অভ্যাসটা আগে করা প্রয়োজন কেননা সকালে না উঠতে পারলে সকালের অভ্যাস গড়ে তোলা অসম্ভব।

আসুন জেনে নেই সকালে উঠার ব্যাপারে কিছু মনীষীদের বানী- 

“শীঘ্র ঘুমানো এবং তাড়াতাড়ি ওঠা একজন মানুষকে সুস্থ, ধনী এবং জ্ঞানী করে তোলে।” – বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন, আমেরিকান বিনিয়োগকারী

“প্রতি সকালে একজন শিক্ষানবিস হতে ইচ্ছুক হন।” – মেস্টার একহার্ট, জার্মান দার্শনিক

“সকালে এক ঘন্টা হারাবেন, এবং আপনি সারা দিন এটির জন্য আফসোস করবেন।” – রিচার্ড হোয়াটলি, ইংরেজি শিক্ষাবিদ

“সকালের আগে ঘুম থেকে উঠা ভাল, কারণ এই ধরনের অভ্যাসগুলি স্বাস্থ্য, সম্পদ এবং জ্ঞানে অবদান রাখে।” – এরিস্টটল, গ্রীক দার্শনিক

“আমরা যা বারবার করি। শ্রেষ্ঠত্ব, তারপর, একটি কাজ কিন্তু একটি অভ্যাস নয়.” – এরিস্টটল

 

সকালের অভ্যাস বা রুটিন কি ?

সকালের অভ্যাস/ আচার-আচরণ বা রুটিন হল এমন জিনিস যা আপনি আপনার প্রতিটা দিন ভালোভাবে শুরু করার জন্য করেন। কিছু কিছু লোকের জন্য, এর মধ্যে প্রার্থনা করা বা মনকে নিশ্চিতকরণ বা সতেজ করার অভ্যাস অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে, অন্যদের জন্য তারা একটি বই পড়্তে  বা তাদের জার্নালে/ ব্লগে/ দিনলিপিতে লিখতে  পছন্দ করে থাকে। যাই হোক না কেন যে অভ্যাসটি আপনার জন্য দিনের শুরুটা সতেজ ও প্রানবন্ত করতে কাজ করে – সেটিকে সময় দিন এবং প্রতিদিন এই অভ্যাসটি অনুশীলন করা নিশ্চিত করুন নিয়মিতভাবে! আর এই কাজ বা কাজের সমষ্টিই হল আপনার সকালের অভ্যাস বা রুটিন যা আপনার প্রতিটি দিনকে কর্মময় করে তুলবে।

অন্যকথায়, সহজভাবে বলতে গেলে, একটি সকালের রুটিন হল মূলত কতগুলো  কর্মের সমষ্টি যা আপনি সকালে করেন নিয়মমাফিক ও প্রতিনিয়তই, সাধারণত আপনার দিনের প্রধান কার্যকলাপ যেমন, কাজ করা বা স্কুলে যাওয়ার আগে। এক গ্লাস পানি পান করা বা দাঁত ব্রাশ করা থেকে শুরু করে দুই ঘণ্টার ওয়ার্কআউট বা ব্যায়াম করা বা খোলা মাঠে দৌড়ানো- এই কাজগুলোও হতে পারে।

সকালের অভ্যাস বা রুটিনের প্রয়োজনীতা কি-

ইন্টারনেট দুনিয়ায় সকালের রুটিনের ধারনায় পরিপূর্ণ, সেইসাথে কীভাবে দুর্দান্ত-প্রতিভাবান  এবং সফল মানুষেরা তাদের সকালকে অভ্যাসকে গড়ে তুলে তার উদাহরণও অজস্র। কিন্তু সত্য হল আপনার জন্য নিখুঁত  ও সঠিক সকালের রুটিন কী তা আপনি ছাড়া কেউ বলতে পারবে না।

এর কারণ আমরা সবাই ভিন্নভাবে কাজ করি, বিভিন্ন জৈবিক ছন্দ, ভিন্ন পছন্দ এবং বিভিন্ন উৎপাদনশীলতার রকমফের। একজন ব্যক্তি পাঁচ মাইল দৌড় দিয়ে তাদের দিন শুরু করতে পছন্দ করেন আবার অন্যজন মৃদু যোগব্যায়াম বেছে নেন দিনের শুরুর অভ্যাসে এবং তৃতীয়জন মনে করেন যে তারা দুজনেই পাগল কারন সে সকাল 10 টায় বিছানায় তার চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে।

আপনার সকালের রুটিন বাকি দিনের জন্য একটা ছন্দ নিয়ে আসে। এখানে ১০টি সহজ সকালের অভ্যাস রয়েছে যা আপনি একটি সকালের  রুটিন তৈরি করে অনুশীলন করতে পারেন যা আপনাকে সাফল্যের জন্য প্রস্তুত করবে।

আপনার সকালের সুর আপনার দিনের স্বর নির্ধারণ করবে, তাই সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা শুরু করা প্রয়োজন। আপনি যখন সকালের জন্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগত আচরণ তৈরি করবেন, আপনি আপনার দিনটিকে সাফল্যের জন্য প্রস্তুত করবেন সন্দেহ নাই।

আপনি কি কখনও লক্ষ্য করেছেন যখন আপনার সকালটি একটি উন্মাদনায় বা হতাশায় শুরু হয় – যখন আপনার অ্যালার্ম স্নুজ করেন , সকালের নাস্তা এড়িয়ে যান – আর আপনার বাকি দিনগুলিও সেই বিশৃঙ্খল দিনটাকে অনুসরণ করতে থাকে এবং আপনার বিশৃংখল মেজাজকে প্রতিফলিত করে  প্রাত্যহিক কাজ-কর্মে ।

আপনি প্রতিদিন সকালের অভ্যাসগুলি সম্বন্ধে সচেতন হন বা না হন, আপনি সর্বদা অভ্যাসের অধীনে কাজ করেন (ভাল এবং খারাপ উভয়ই) – এবং সেগুলো আপনার দৈনন্দিন অস্তিত্বের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার অংশ হল এর সাথে অভ্যস্থ হওয়া।  আপনি যদি ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে তুলতে চান, তাহলে সেগুলি আপনার  প্রকৃতিতে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে সেগুলো মজ্জাগত করে গঠনের জন্য  কিছু প্রচেষ্টা করতে হবে যা পরে স্বয়ংক্রিয় দৈনিক কার্যে পরিণত হবে।

বিশেষতঃ  সকালের অভ্যাসের ক্ষেত্রে চরম সত্য যে সকালে আপনি যা আপনার মধ্যে মনন করেন তা আপনার বাকি দিনে আপনার অনুভূতি, কাজ এবং চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করে।

 

১০টি সহজ সকালের অভ্যাস যা আপনাকে একটি সতেজ দিন উপহার দিতে পারে 

এখানে ১০টি সহজ অভ্যাস রয়েছে যা আপনি এখন আপনার সকালের রুটিনে তালিকাভুক্ত করতে পারেন, যেখানে আপনি অনুভব করছেন, অভিনয় করছেন এবং আপনার বাকি দিনগুলি বা সামনের দিনগুলির জন্য আপনার সর্বোচ্চ সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তা করছেন।

 

১. আপনার স্মার্টফোন স্নুজ করুনঃ
বর্তমান সময়ে আমাদের একটা স্বাভাবিক সকালের কাজ হলো ঘুম থেকে উঠার পর স্মার্টফোনের পর্দায় উকি মারা। আর এই অভ্যাসের কারনেই আপনি নিজের ক্ষতি করছেন। আপনার স্মার্টফোনে বার্তা বা কাজের ইমেল চেক করার ফলে আপনি খুবতারাতারি নিজের অজান্তেই একটি সক্রিয়-সতেজ মানসিকতার পরিবর্তে একটি প্রতিক্রিয়াশীল ও স্নায়ুচাপের মানসিকতা গড়ে তুলছেন যা কখনো আপনাকে দিনেই প্রথম মুহুর্তেই অস্থির, চিন্তিত বা হতাশ করে তুলতে পারে, যা আপনাকে অভ্যন্তরীণ শান্তি এবং আত্ম-নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে একটি প্রতিরক্ষামূলক অবস্থায় আপনার দিন শুরু করতে বাধ্য করবে। ঘুম থেকে ওঠার পর আপনি প্রথমেই যে  কাজটা করবেন সেটা হল আপনার ফোনকে আপনার থেকে দুরে রাখুন যতক্ষণ না আপনার নির্দিষ্ট সকালের তালিকার কাজগুলো শেষ হয়। আপনার দিনের প্রথম ঘন্টা প্রযুক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার চেষ্টা করুন যাতে আপনি বর্তমান-মুহূর্ত আত্ত-সচেতনতা এবং কটি ইতিবাচক মনযোগ দিয়ে আপনার দিন শুরু করতে পারেন।

 

২. উষ্ণ জল, তাজা শুরু-এই কথাটি মেনে চলুনঃ 
এক ঘন্টা খানেক চুমুক না দিয়ে সকালে শুধু এক গ্লাস জল পান করা- আপনার শরীরকে হাইড্রেট করার একটি ভাল উপায়। এক  গ্লাস উষ্ণ জলে লেবু যোগ করার আয়ুর্বেদিক এই কৌশল আপনার পাচনতন্ত্র থেকে বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করতে সাহায্য করে যা রাতে আপনার শরীরে জমে থাকতে পারে, এর পাশাপাশি ভিটামিন সি এর একটি ভাল উৎসও হতে পারে, আপনার শ্বাসকে সতেজ করে, ওজন কমাতে সহায়তা করে এবং বিপাক ও হজম প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে তুলে। সকালের প্রথম চুমুকেই স্বাস্থ্যকর এবং সতেজ হওার জন্য এর থেকে উৎকৃষ্ট আর কিছু হতে পারে না। তাই আপনার দিন শুরু করুন এক গ্লাস লেবুর পানি দিয়ে।

সকালের অভ্যাস যা আপনাকে করে তুলবে প্রানবন্ত ও কর্মঠ -উষ্ণ জল, তাজা শুরু

৩. মনে আত্ম-সন্তুষ্টুতির ভাব- ভাবুন আপনি কিসের জন্য কৃতজ্ঞঃ 
আপনি বিছানা থেকে উঠার আগে, নিজেকে হাসতে এবং কৃতজ্ঞতা স্বীকারের অনুশীলন করতে অভস্ত্য হোন এবং কয়েক মিনিট সময় দিন এটা ভাবতে। তাহলে মনের মধ্যে একটা স্বর্গীয় সুখ পাবেন যা আপনার মনকে প্রশান্তি দিবে এবং আপনার মধ্যে পজিটিভ শক্তি সঞ্চারণ করবে। আর এটা ভেবে  যখন আপনি হাসেন, তখন এটি আপনার মস্তিষ্ককে ভালো অনুভূতির নিউরোট্রান্সমিটার (ডোপামিন, এন্ডোরফিন এবং সেরোটোনিন) মুক্ত করার জন্য সংকেত দেয়, যা আপনার মেজাজ উন্নত করে, আপনার শরীরকে শিথিল করে এবং আপনার হৃদস্পন্দন কমিয়ে দেয়। আপনি কি এই ইতিবাচক অভ্যাসটির সাথে আপনার দিন শুরু করতে চায় না?

আপনি যখন হাসছেন, আপনি কিসের জন্য কৃতজ্ঞ তা প্রতিফলিত করতে শুরু করুন। গবেষণায় দেখা গেছে কৃতজ্ঞতা অনুশীলন করা অন্যান্য সুবিধার মধ্যে একটি হল এটা স্ট্রেস হরমোন হ্রাস করে এবং মেজাজ উন্নত করে। তাই, একটি সাধারণ দৈনিক কৃতজ্ঞতা অনুশীলন যোগ করা আপনার সকাল শুরু করার একটি দুর্দান্ত উপায় হতে পারে এতে কোন সন্দেহ নাই। তাহলে আপনি একজন ব্যক্তি হিসাবে এবং আপনি জীবনে কৃতজ্ঞ এমন একটি বিষয়ে মনকে নিবিষ্ট করে বিছানায় এক মিনিট সময় নিয়ে আপনার দিন শুরু করুন।

 

৪. আপনার ঘুমানোর বিছানা ছেড়ে যাবার আগে গুছিয়ে যানঃ  
লেখক এবং পডকাস্ট হোস্ট (দ্য টিম ফেরিস শো) টিম ফেরিস,  বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড ও দক্ষতার- বিভিন্ন শিল্পে গুণী শতাধিক অত্যন্ত সফল লোকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তিনি সবসময় জিজ্ঞেস করেন, “আপনার সকালের রুটিন কি?” এর মধ্যে থেকে তিনি পাঁচটি অভ্যাস সংগ্রহ করেছেন যা তিনি তার সকালের রুটিন-  এ অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং তার মধ্যে একটি হল নিজের ঘুমানোর বিছানা গুছিয়ে রাখা

এটি সময় নষ্ট, গুরুত্বহীন বা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হতে পারে কেননা এটি আবার রাতে ব্যবহার করতে যাচ্ছেন, তবে আপনার বিছানা তৈরি করা একটি সহজ পদক্ষেপ মাত্র- যা আপনি সকালে নিতে পারেন আর এটি আপনাকে আপনার দিনটি সম্পন্ন বোধ করে— গর্ব এবং কৃতিত্বের অনুভূতির চেয়ে আর কী ভাল মানসিক প্রসান্তির ছন্দ আর কোন কাজ থেকে পেতে পারবেন না। দায়িত্ব নেওয়া এবং সারা দিন ধরে সাধারণ কাজগুলি সম্পূর্ণ করা আপনাকে আরও বেশি করে নেওয়ার ভিত্তি তৈরি করে দিবে।

 

৫. ধ্যান বান প্রসান্ত-চিত্তে কিছুক্ষন মনকে শান্ত রাখুন করুনঃ 
আপনার দৈনন্দিন সকালের রুটিনে ধ্যানের মতো কিছু ধরণের মননশীলতা অনুশীলনকে অন্তর্ভুক্ত করা আপনাকে মনের প্রসান্তি আনায়নে সাহায্য করতে পারে যা দিনের প্রতিটি কাজের  পদক্ষেপে আপনাকে শক্তি দিতে পারে। আপনার মন এবং আবেগকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে এই অভ্যাসটি, যা তারপরে আপনার সারা দিনের চ্যালেঞ্জগুলির প্রতি আপনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান তা প্রভাবিত করে।

আপনার ধ্যানের সময় দিনের জন্য আপনার উদ্দেশ্য ও কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করার জন্যও একটি দুর্দান্ত সময়। আপনি কারন আপনার দিনটি কীভাবে  অতিবাহিত করতে চান বা আপনি কিভাবে শুরু করতে চান বা কি অর্জন করতে চান সে সম্পর্কে স্পষ্ট হয়ে উঠলে, আপনি স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যা আপনি সত্যিকার অর্থে কর্মের ভিতর দিয়ে বাঁচতে চান এমন জীবন তৈরি করে।  কোথায় শুরু করবেন তা নিশ্চিত করুন।  এখানে একটি সাধারণ ধ্যান যা আপনি সকালে করতে পারেন:

  • একটি আরামদায়ক বসার স্থানে যান এবং পাঁচ মিনিটের জন্য একটি টাইমার সেট করুন।
  • আপনার চোখ বন্ধ করুন এবং আপনার শ্বাসের প্রতি মনোযোগ নিবিষ্ঠ করুন।
  • আস্তে আস্তে এক থেকে চার পর্যন্ত গণনার সময় আপনার নাক দিয়ে শ্বাস নিন, শ্বাস নেয়ার সময়ের সমান সময় আপনার ভিতরে শ্বাস ধরে রাখুন। এবং তারপর  এক থেকে আট গণনার সময় পর্যন্ত আপনার নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন।
  • এভাবে প্রতিবার যখন আপনি আপনার মন ঘুরপাক খাচ্ছে লক্ষ্য করেন, আপনার শ্বাসের উপর ফোকাস করার জন্য আলতো করে এটিকে ফিরিয়ে আনুন।
  • টাইমার বন্ধ হয়ে গেলে, আপনার গণনা ছেড়ে দিন, কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য আপনার চোখ বন্ধ করে বসে থাকুন।
  • আপনার দিনের জন্য একটি উদ্দেশ্য সেট করুন এবং নিজেকে এই অভিপ্রায় পূরণের দৃঢ় প্রতিজ্ঞ করুন।
  • আপনার চোখ খুলুন এবং তারপরে আপনার সাথে শক্তি এবং দীপ্ত অভিপ্রায় নিয়ে আপনার দিনের সাথে এগিয়ে যান।

সকালের অভ্যাস যা আপনাকে করে তুলবে প্রানবন্ত ও কর্মঠ -ধ্যান বান প্রসান্ত-চিত্ত

৬. আপনার শরীর আপনার শরীরের জড়তা কাটাতে ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করুনঃ 
এটি একটি সাধারণ ব্যায়াম রুটিন হতে পারে অথবা আপনার ইচ্ছামত কোন খোলা জায়গায় হাটাও হতে পারে। আপনার পোষা প্রাণীর সাথে দ্রুত হাঁটা, সিট-আপ এবং পুশ-আপে করা, অথবা সামান্য হাটাচলা করা- যাই হোক নাক কেন, আপনার দিন শুরুর প্রথমেই শরীর এবং মনকে শক্তিশালী করার জন্য দেহের অলসতাকে কাটিয়ে নিন। আপনার জন্য কোন ধরনের ব্যায়াম সঠিক তা নির্ধারণ করুন এবং এটি নির্ধারণ করুন। এটি জটিল, দীর্ঘ বা তীব্র হতে হবে এমন না, তবে সকালে কিছু ধরণের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বা ব্যায়াম আপনার রক্ত ​​​​প্রবাহিত করবে এবং যে কোনও মানসিক চাপকে দূর করতে সহায়তা করবে। এমনকি আপনার রুটিনকে আকর্ষণীয় রাখতে আপনি প্রতিদিন কি ধরনের ব্যায়াম করেন তাও আপনি পরিবর্তন করতে পারেন কিছু দিন পরপর।

 

৭. স্ব-যত্ন বা নিজের পরিচয্যা দিয়ে শুরু করুনঃ 
আপনার চেহারায় সময় এবং শ্রম দেওয়া আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে সাহায্য করে। সুতরাং, গোসল করুন, আপনার মুখ ধুয়ে নিন, আপনার দাঁত ব্রাশ করুন, আপনার চুল আঁচড়ান, লোশন/তেল লাগান, ইমপ্রেস করার জন্য পোশাক পরুন এবং অন্য কোনো স্বাস্থ্যবিধি/গ্রুমিং অভ্যাস প্রয়োগ করুন যা আপনাকে নিজের সম্পর্কে ভালো বোধ কয়ায় ও আত্ম-তৃপ্তি যোগায়। এর মধ্যে থাকতে পারে আগের রাতে আপনার জামাকাপড় বাছাই করা (বিশেষ করে যদি আপনার সকালে সময় কম থাকে) বা আপনার কাপড় ইস্ত্রি করা – যাই হোক না কেন আপনার মনে হয় আপনি আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নিচ্ছেন, উপস্থাপনযোগ্য দেখাচ্ছে এবং আত্মবিশ্বাসী বোধ করছেন। 

 

৮. একটি স্বাস্থ্যকর নাস্তা করুনঃ 
আপনি সম্ভবত শুনেছেন যে সকালের নাস্তা হল দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার। আপনি যখন একটি স্বাস্থ্যকর নাস্তা (চর্বিহীন প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং পুরো শস্য) খাওয়ার জন্য সময় নেন, তখন আপনার সারাদিনে আরও শক্তি থাকবে এবং ফোকাস এবং মনোনিবেশ করার একটি শক্তিশালী ক্ষমতাও থাকবে।

 

৯. আপনার “টু-ডু বা কাজের তালিকা” পুনরায় স্বরন করুনঃ 
দিনের জন্য একটি “করণীয়” তালিকা লিখতে কয়েক মিনিট সময় নিন। তারপরে এটিকে অগ্রাধিকার দিন যাতে আপনার দিনের তালিকায় এটিতে মাত্র ৩ থেকে ৫টি আইটেম থাকে—আপনি প্রথমে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি মোকাবেলা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে অগ্রাধিকারের ক্রম অনুসারে র‌্যাঙ্ক করে নিতেও পারেন।  আপনার মনের মধ্যে ভাসমান রাখার পরিবর্তে আপনার “করণীয়গুলি” লিখে রাখা মানসিক দুর্বলতাকে দূর করতে সহায়তা করে।

১০. পর্যাপ্ত বিশ্রামে ও তৃপ্তিতে রাতে ঘুমানঃ 
এই শেষটি আপনার সকালের জন্য কোন অভ্যাস নয় . তবে, আপনি নতুন, স্বাস্থ্যকর সকালের অভ্যাস বাস্তবায়নের আশা করার আগে, আপনার শরীর এবং মনের একটি সুস্বাস্থ্যের ভিত্তি থাকা উচিত। আপনি জেগে থাকার সময় যেভাবে অনুভব করেন তা আপনার ঘুমের অভ্যাসের উপর নির্ভর করে। আপনি যদি অস্বস্তি, খিটখিটে বা ক্লান্ত বোধ করেন তবে আপনি পর্যাপ্ত মানের ঘুম পাচ্ছেন না।

ঘুমের সময়, আপনার শরীর সুস্থ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা সমর্থন করতে এবং আপনার শারীরিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে কাজ করে। প্রকৃতপক্ষে, ঘুম আপনার শারীরিক সুস্থতা, মানসিক স্বচ্ছতা এবং জীবনের গুণমানে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যে চলমান ঘুমের ঘাটতি (পরিমাণটি ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হয়, তবে সাধারণত এর অর্থ প্রতি রাতে ৬ থেকে ৮ ঘন্টার কম বিশ্রামের ঘুম হয়) আপনার স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে—এবং আপনি কতটা ভালো ভাবেন, প্রতিক্রিয়া দেখান, কাজ করেন, শিখেন এবং অন্যদের সাথে মিলিত হন।

আপনি যদি খুঁজে পান যে আপনি পর্যাপ্ত মানের ঘুম পাচ্ছেন না, তাহলে ঘুমানোর ঘুমানোর জন্য কি কি উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে তা খুজুন। 

আপনি যখন একটি রাতের বিশ্রামের ঘুমের পর আপনার দিন শুরু করবেন, তখন আপনি আপনার নতুন সকালের অভ্যাসের সাথে শুরু করে, পুনরুজ্জীবিত বোধ করবেন এবং দিনটি নিতে প্রস্তুত হবেন।