১ ডিসেম্বর পালিত হয় বিশ্ব এইডস দিবস। এই দিনটি মূলত বিশ্বের সকল মানুষকে এইচআইভি ও এইডস সম্পর্কে সচেতন করার জন্য নির্ধারিত। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চিকিৎসা ও সচেতনতার কারণে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তবুও বাংলাদেশে এবং বিশ্বজুড়ে এইডস নিয়ে অনেক ভুল ধারণা ও অবহেলা রয়ে গেছে। বিশেষ করে আমাদের দেশের চাকরির পরীক্ষায় এই রোগ সম্পর্কিত প্রশ্ন বা স্বাস্থ্য বিষয়ক অংশে এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এইডস ও এইচআইভি: কী ও কেন?
-
এইচআইভি (HIV) অর্থাৎ হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস হলো এমন একটি ভাইরাস যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করে।
-
ভাইরাসটি ধীরে ধীরে রোগ প্রতিরোধী কোষগুলোকে ধ্বংস করে দেয়।
-
যখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই কমে যায় যে শরীর সাধারণ সংক্রমণ ও রোগ প্রতিরোধ করতে পারে না, তখন সেটাই এইডস (AIDS)। অর্থাৎ, এইডস হলো এইচআইভির শেষ পর্যায়।
এইডস সংক্রমণের প্রধান কারণ ও ঝুঁকি
-
অবিবাহিত বা বিবাহবহির্ভূত অস্থির যৌনসম্পর্ক। সঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্ত না থাকা ঝুঁকি বাড়ায়।
-
যৌনমাধ্যমে ছড়ানো অন্যান্য রোগ যেমন গনোরিয়া, সিফিলিস থাকলে এইডসের ঝুঁকি বাড়ে।
-
কনডম ব্যবহার না করা বা ভুল ব্যবহার।
-
শেয়ার করা সিরিঞ্জ বা নিডল ব্যবহার, বিশেষ করে ড্রাগ সেবনের সময়।
-
অন্যের ব্যবহৃত ব্লেড, রেজার বা ট্যাটু মেশিন ব্যবহার।
-
নিরাপত্তাহীন রক্ত সঞ্চালন বা অপরিষ্কার মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি।
-
মায়ের কাছ থেকে শিশুতে সংক্রমণ।
বাংলাদেশে এইডসের বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশে সরকার ও বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। নিয়মিত ব্লাড ব্যাংক ও হাসপাতালগুলোতে রক্ত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। তবে জনসচেতনতা এবং নিরাপদ যৌনাচার সম্পর্কে আরও শিক্ষা প্রয়োজন।
এইডসের লক্ষণ ও উপসর্গ
প্রাথমিক অবস্থায় এইডস ধরা পড়া কঠিন, কারণ উপসর্গ খুব সাধারণ এবং অন্যান্য অসুখের মতো। তবে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে সতর্ক হওয়া জরুরি:
-
১০ দিনের বেশি অবিরাম জ্বর।
-
দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া।
-
মুখ, গলা, জরায়ুমুখে ছত্রাক সংক্রমণ, সাদা স্তর বা পুরু জমাট।
-
বিভিন্ন স্থানে ঘা বা ফোস্কা।
-
অকারণে ওজন কমে যাওয়া ও দুর্বলতা।
-
ঘাড় বা কুঁচকিতে ফোলা লিম্ফ নোড।
-
ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি বা রক্তক্ষরণ।
-
অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা শক্তি কমে যাওয়া।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
এই উপসর্গগুলো যদি দেখা যায়, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাপন করে থাকেন বা সন্দেহ হয়, তাহলে দ্রুত নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এইডস প্রতিরোধের কার্যকর উপায়
-
বিশ্বস্ত সঙ্গী নির্বাচন ও দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক বজায় রাখা।
-
যৌন সম্পর্কের সময় কনডম ব্যবহার নিশ্চিত করা।
-
একবার ব্যবহার করা সিরিঞ্জ, ব্লেড, রেজার পুনরায় ব্যবহার থেকে বিরত থাকা।
-
নিরাপদ ও পরীক্ষিত ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত গ্রহণ।
-
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও যন্ত্রপাতি থেকে দূরে থাকা।
-
মাতৃগর্ভাবস্থায় মাতৃ-শিশু সংক্রমণ প্রতিরোধে নিয়মিত পরীক্ষা ও চিকিৎসা।
বিশ্ব এইডস দিবসে করণীয়
১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবসে সরকার, স্বাস্থ্য সংস্থা ও সামাজিক সংগঠনগুলো জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে। সবাই মিলে সচেতনতা বৃদ্ধি, ভুল তথ্য দূরীকরণ এবং নিরাপদ জীবনযাপনের জন্য কাজ করা দরকার।
এইডস এবং বাংলাদেশি চাকরির পরীক্ষায় গুরুত্ব
বাংলাদেশে যেকোনো সরকারি ও বেসরকারি চাকরির পরীক্ষায় স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশ্নে এইডসের বিষয়টি প্রায়শই আসে। তাই এই রোগের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও সচেতনতার বিষয়ে ভালো ধারণা থাকা আবশ্যক।
উপসংহার
এইডস ভয়ংকর রোগ হলেও সঠিক সচেতনতা, নিরাপদ অভ্যাস ও দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে এর প্রভাব অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস এই সচেতনতা বাড়ানোর মহৎ উদ্যোগ।